সালটা ২০৪৪। সকাল ৯টা বেজে ১৫ মিনিট। বাসার ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্টের ডাকে ঘুম ভাঙলো নাফিজের। ঘুম থেকে উঠে মায়া’কে শুভ সকাল জানিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে গেলো নাফিজ। (মায়া তার ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট এর নাম)
ওয়াশরুমে যাওয়ার পথে নাফিজের মনে পড়লো, ‘আরেহ আজ তো ছুটির দিন! অনলাইনে কিছু খাবার অর্ডার করা যাক!’ মায়া’কে অনলাইনে খাবার অর্ডার দিতে বললো নাফিজ। মায়াও নিজের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাঁটিয়ে নাফিজের পছন্দমতো খাবার অর্ডার করে দিলো।
দাঁত ব্রাশ শেষে, নাফিজ একটা বই হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলো। বইটা হলো ‘২০ বছর আগে মানুষের জীবনযাপন কেমন ছিল’ তা নিয়ে। বই পড়তে পড়তে সে জানলো ২০২১ সালের দিকে মানুষ নাকি সামান্য খাবার অর্ডার করার সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ‘কোন খাবার অর্ডার করবো’ এটা ভাবতেই কাটিয়ে দিতো! নাফিজ এটা দেখে হেসে উঠলো! সত্যিই, প্রযুক্তি এখন জীবনকে কত্তো সহজ করে দিয়েছে!
অল্পকিছুক্ষণের মাঝেই একটা ডেলিভারি রোবট দরজায় কড়া নারলো। নাফিজ গিয়ে তার খাবারটা নিয়ে এলো। খাবার খেতে খেতে নাফিজ আবার বইটা পড়তে শুরু করলো। নাফিজ বইয়ে আরও জানতে পারলো, ২০ বছর আগে ডেলিভারি দেওয়ার সময় নাকি রাইডারকে লোকেশন খুঁজে পেতে বেশ হ্যাঁপা পোহাতে হতো! আজ রোবটগুলো কতো সহজেই সেই কাজটা করে দেয়!!
খাবার খাওয়া শেষ করে হাত ধুতে যাচ্ছিলো নাফিজ। সে সময়ই মায়া তাকে মনে করিয়ে দিলো বেশি পানি ব্যবহার না করতে। দুই দশক আগে মানুষ ইচ্ছেমতো অযথা প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার করতো। তাই এখন দেশে ব্যাপক পানি সংকট!
হাত ধুয়ে এসে নাফিজ মায়ার কাছে জানতে চাইলো আজ তার কোনো বিশেষ কাজ আছে কি-না। মায়া তার ডাটাবেইজ ঘেটে বললো, ‘আজ তোমার বন্ধু তুহিনের জন্মদিন। বিকেল ৫টায় তার বাসায় যেতে হবে।’ তখন নাফিজের মনে পড়লো- ‘এইই যাহ! আমি তো ওর জন্য গিফট কিনতেই ভুলে গেছি! যাই, মায়াকে বলি একটা কিছু অর্ডার করে রাখতে’ যেমন বলা তেমন কাজ! মায়া তুহিনের ভার্চুয়াল এসিস্টান্ট এর সাথে যোগাযোগ করে তুহিনের পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে জেনে নিলো। জানতে পারলো, সে গত কয়েকদিন ধরেই একটা সায়েন্স ফিক্শনের বই খুঁজছে। মায়া গিফট হিসেবে সেটা অনলাইনে অর্ডার করে দিলো।
বিকেল ৪টা বেজে ৩০ মিনিট। নাফিজ বাইরে দাঁড়িয়ে আছে তার ‘উঠাও রাইডার’ এর অপেক্ষায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা অটোপাইলট (চালকবিহীন) গাড়ি এসে তার সামনে দাঁড়ালো। বুঝতে বাকি রইলো না এটাই তার রাইডার। উঠে পড়লো গাড়িতে।
তুহিনের বাসায় সব বন্ধুরা একসাথে হয়েছে আজ। অনেক দিন পর সবাই একসাথে হয়ে বেশ ভালো সময় কাটালো। তারা অনেক দিন পর বন্ধুদের দেখা পেয়ে যেন ভুলেই গিয়েছিল প্রযুক্তি বলে কিছু আছে! সবাই অনুধাবন করতে পারলো- সত্যিই, সবসময় প্রযুক্তিনির্ভর থাকাটাও ভালোনা! তখন নাফিজ বলে উঠলো ‘মনে রাখিস, আমরা যেন প্রযুক্তিকে ব্যবহার করি, প্রযুক্তি যেন আমাদের না ব্যবহার করে!’
বন্ধুদের বিদায় জানিয়ে বাসায় ফিরে এলো নাফিজ। বাসায় আসতে আসতে রাত হয়ে গিয়েছে অনেক। তাই একটু ফ্রেশ হয়েই ঘুমিয়ে পড়লো সে। ঘুমাতে ঘুমাতে তার মনে প্রশ্ন জাগলো, ‘কেমন হতো যদি স্বপ্নকে নিয়ন্ত্রণ করা যেত? হয়তোবা ২০৬০-৬৫ সাল আসতে আসতে এটাও সম্ভব হয়ে যাবে!’
লিখেছেনঃ হিমেল দাস
অংশগ্রহণকারীর পোস্টঃ ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি
প্রতিযোগিতার ফলাফলঃ এখানে ক্লিক করুন
0 Comments